সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত।


 


*শানে নজুলঃ-* সুরা হাশরে ইহুদিদের পৃথিবীতে নির্বাসন দণ্ড ও পরকালে জাহান্নামের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সঃ) মদীনায় আগমন করার পর বিভিন্ন ইহুদি গোত্রের সাথে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন । মদিনা থেকে দু মাইল দূরে বসবাস কারী বনু-নাযির গোত্রও শান্তি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত ছিল। একবার আমর বিন উমাইয়া যামরীর হাতে দুটি হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী রক্তপন আদায় করা মুসলমান ইহুদি সকলের কর্তব্য ছিল। রসুলুল্লাহ (সঃ) এর জন্য মুসলমানদের কাছ থেকে চাঁদা তুললেন। তারপর চুক্তি অনুযায়ী ইহুদিদের কাছ থেকেও রক্ত বিনিময়ের অর্থ আদায় করার জন্য বনু-নাযির গোত্রের কাছে গমন করলেন। তারা এটাকে তাঁকে হত্যা করার পরম সুযোগ মনে করে রসুলেপাক (সঃ) কে একটা প্রাচীরের পাশে বসে অপেক্ষা করার অনুরোধ করল। এর পর তারা গোপনে পরামর্শ করে স্থির করল, তিনি যে প্রাচীরের নিচে উপবিষ্ট আছেন, এক ব্যক্তি সেই প্রাচীরের উপরে উঠে একটি বিরাট ও ভারী পাথর তাঁর উপর ছেড়ে দেবে, যাতে তার সব কিছু শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তিনি ওহীর মাধ্যমে এই চক্রান্তের বিষয় অবগত হয়ে গেলেন। তারপর রসুলে পাক (সঃ) তাদের উপর রাগান্বিত হয়ে তাদের কে মদীনা ছাড়ার জন্য দশদিন সময় দিলেন। তারা মদীনা ছাড়তে সম্মত হলে আব্দুল্লাহ বিন উবাই মোনাফেক তাদের কে সৈন্য দ্বারা সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিল। প্রতিশ্রুতির উপর ভরসা করে তারা মদীনা ছাড়তে অস্বীকার করল। তারপর রসুলে পাক (সঃ) সাহাবায়ে কেরামদের সাথে নিয়ে বনি-নাযির গোত্রকে আক্রমন করলেন। তাদেরকে চতুর্দিক থেকে অবরোধ করলেন অবশেষে তারা নিরুপায় হয়ে নির্বাসন দণ্ড মেনে নিল। এই অবস্থায় ও রসুলে পাক (সঃ) তাদের প্রতি সৌজন্য প্রদর্শন করে আদেশ দিলেন, আসবাব যে পরিমান সাথে নিয়ে যেতে পার, নিয়ে যাও। তবে কোন অস্ত্র-শস্ত্র নিতে পারবেনা। সে মতে বনু-নাযিরের কিছু লোক সিরিয়া এবং কিছু লোক খয়বারে চলে গেল। এর পর হজরত ওমর (রাঃ) তাঁর খেলাফাত কালে তাদেরকে পুনরায় অন্যান্য ইহুদিদের সাথে খয়বার থেকে সিরিয়ায় নির্বাসিত করেন। এই দুটি নির্বাসনই প্রথম সমাবেশ ও দ্বিতীয় সমাবেশ নামে অভিহিত। (যাদুল মায়াদ)

 ফজিলতঃ- তিরমিযী শরীফে হাদিসে হজরত মা'কাল বিন ইয়াসার (রাঃ) এর বর্ণিত রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সকালে ‎‫أعُوذُ باللهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ‬‎


পাঠ করার পর ২৮ পারা সুরা হাশরের তিন আয়াত

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ (22) هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ (23) هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ [الحشر:22-24]

উচ্চারণ : হুআল্লা হুল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলিমুল গাইবী ওয়াশ শাহাদাতি, হুয়ার রহমানুর রহিম। হুআল্লা হুল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল মালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল আজিজুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির। ছুবহানাল্লোহি আম্মা ইয়ূশরিকুন। হুআল্লাহুল খলিকুল বা-রিউল মুছাওওয়িরু লাহুল আসমাউল হুসনা। ইউছাব্বিহু লাহু মা ফিস-সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ব; ওয়া হুয়াল আজিজুল হাকিম।

 তিন বার পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশ্তা নিযুক্ত করে দেবেন। তাঁরা সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর জন্য রহমতের দোওয়া করবে। সে দিন তিনি ইন্তেকাল করলে শহীদের দর্জালাভ করবেন। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এ ভাবে পাঠ করবেন, তিনি সেই রাতে ইন্তেকাল করলে শহীদের দর্জালাভ করবেন।


আরো উল্লেখ আছে হজরত আবু উমামা (রাঃ) বলেন যে রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি সুরা হাসরের শেষ অংশ রাতে অথবা দিনে পাঠ করবেন এবং উক্ত রাতে অথবা দিনে যদি তার মৃত্যু হয় তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে। (তফসীরে মাযহারী, খণ্ড ৯, পৃঃ ২৫৭ )


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ